এম আর মাইনউদ্দীন, নরসিংদী।
ডা. স্নিগ্ধা মন্ডল তমা, একজন মা এবং একজন বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা। পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি আজ সফল। তার এ সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তার স্কুল শিক্ষক- শিক্ষিকা মা/ বাবা, স্বামী এবং তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি। ভোর রাতে সন্তান প্রসব করে,
সকালে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধাবী মেয়েটি আজ বিসিএস ক্যাডার। নরসিংদী সদর উপজেলা মাধবদী থানাধীন পাইকারচর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বালাপুর নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বাবু নরেশ চন্দ্র মন্ডল এবং শিক্ষিকা সবিতা সরকারের একমাত্র কণ্যা ডা.স্নিগ্ধা মন্ডল তমা।
যখন বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে সরকারি চাকুরি পাওয়াটাকে ‘বাঘের চোখ’জয় করার মতো ভাবছেন, ঠিক তখনই পরপর দুটি প্রতিযোগিতাময় সরকারি চাকুরি কে, পরিশ্রম আর মেধা দ্বারা জয় করে নিয়েছেন ডা.স্নিগ্ধা মন্ডল তমা।
তার সাফল্যের অংশ রাত ১২টা ৫০মিনিটে সন্তান প্রসব করলেন,এবং রাত পোহালেই সকাল ৮ টায় আপনার মেডিকেলের দুইটি কার্ড ফাইনাল পরীক্ষা। অদম্য আগ্রহ এবং ইচ্ছা শক্তিকেই এই সাফল্যের বাহক ধরে নিয়েছে তার শিক্ষক এবং সহপাঠীরা। ডা.স্নিগ্ধা মন্ডল তমা সন্তান প্রসবের সেই ভয়াল রাতটি ছিল ৮ ই আগষ্ট ২০১৭।
ডা.স্নিগ্ধা মন্ডল তমা বালাপুর নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক এবং নরসিংদীর আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ হতে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এনাম মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস পাশ করেন।
এনাম মেডিকেলের ৩য় বর্ষ ছাত্রী থাকাকালীন, পারিবারিকভাবে তিনি ৩৫তম বিসিএস ক্যডার ডা. তুষার কান্তি রায় তপুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
আমাদের দেশের মেয়েদের বিয়েকে সাধারণত স্বপ্নভঙ্গের মূল বলেই ধরে নেওয়া হয়,কারন অধিকাংশ ছেলেরাই লেখাপড়ার প্রতুশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করলেও,পরবর্তীতে বউকে নিরুৎসাহিত করে লেখাপড়াতে!..কিন্তু স্নিগ্ধার জন্য তাঁর বিয়েটা স্বপ্নভঙ্গের মূল নয় বরং আশির্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল,৩৫তম বিসিএস ক্যাডার ডা. তুষার কান্তি রায় তপু তাঁর জীবনে শুধু জীবনসঙ্গী হিসেবেই নয় বরং একজন সহযোগী সহযোদ্ধা হিসেবে সবসময় স্নিগ্ধার পাশে ছিলেন, আজ তাঁরই অনুপ্রেরণা আর উৎসাহে স্নিগ্ধা এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন ৪২ তম বিসিএস ক্যাডার ডা.স্নিগ্ধা মন্ডল তমা।
ঘরে একজন কাজের বুয়া নেই,অথচ স্বামী,সন্তান সংসার সামলিয়েও তিনি তাঁর লেখাপড়াটাকে চালিয়ে নিয়েছিলেন,এমবিবিএস পাশ করার পর তাঁর প্রধান লক্ষ্যই ছিল বিসিএস পরীক্ষা, এই অভীষ্ট লক্ষ্যই তিনি এগিয়ে চলছিলেন,পাশাপাশি এফসিপিএস এর লেখাপড়াটাও চালিয়েছিলেন,অভিজ্ঞতার জন্য অন্যান্য চাকুরির পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিশু স্বাস্থ্য চিকিৎসক হিসেবে তিনি সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পান নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে,সরকারি চাকুরি পেয়েও তিনি তাঁর স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে মিথ্যা করতে চান না,তাই তিনি চাকরির পাশাপাশি সংসার সামলিয়েও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছিলেন,থেমে থাকেননি একটুও! সুযোগ পেলেই পড়তে বসতেন,প্রতিকূলতা কখনোই তাঁকে ভাঙতে পারেনি,পরিশ্রমই তাঁর কাছে সফলতার মূল,আজ তাঁরই ফলশ্রুতিতে ৪২ তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলি ও রিটেনের পর ভাইভা পরীক্ষায় সহকারি সার্জনে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন জীবন যুদ্ধে সফল হওয়া নারী ডা.স্নিগ্ধা মন্ডল তমা।
তাঁর এই সফলতায় তিনি শ্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে,তাঁর মা-বাবা,ছোট ভাই সন্দীপ মন্ডল জয়,একমাত্র সন্তান শৌনক তূর্য রায় এবং অনুপ্রেরণা দেওয়া এবং আজকের সফলতার প্রধান কারন তাঁর জীবন সঙ্গী ডা. তুষার কান্তি রায় তপুর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান এবং তিনি যেনো সকল স্তরের মানুষের সেবা করতে পারেন সেই জন্য সবার আর্শিবাদ কামনা করেছেন।
Leave a Reply