করোনাভাইরাস মহামারিতে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সম্প্রতি সারা দেশের মতো রংপুরের প্রাথমিক, মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিন্তু স্কুল খুললেও রংপুরে প্রাথমিকে পড়ুয়া প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষার্থী ‘স্কুল ফিডিং’ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। চলতি বছরের জুন থেকে টিফিন হিসাবে খেতে দেওয়া বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ হয়।
এতে দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। তারা বলছে মহামারী করোনার কারণে দরিদ্র এলাকার অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে, আবার অনেক শিক্ষার্থী অভিভাবককে সাহায্য করার জন্য কর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতে এই কার্যক্রম পুনরায় চালু করা না হলে দারিদ্র পীড়িত এলাকা গুলোতে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার বাড়বে ।
জানা যায়, প্রাথমিক স্তরে দারিদ্র পীড়িত পরিবারের শিশুদের স্কুলমুখী করতে ২০০১ সালে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় সরকার । প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ৩৫টি জেলার প্রাথমিক স্কুলের ৩১ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে প্রতিদিন টিফিন হিসাবে বিস্কুট খেতে দেয়া হত। এরমধ্যে রংপুর জেলার ৫৬১টি স্কুলের ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৪ জন শিশু শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে। যার মধ্যে গঙ্গাচড়ার ১৮০টি স্কুলের ৩৭ হাজার ৫২৩ জন, কাউনিয়ার ১২৮টি স্কুলের ২৫ হাজার ১৭৭, বদরগঞ্জে ১৭৭টি স্কুলের ৩৪ হাজার ৩৪৯ এবং তারাগঞ্জের ৭৬টি স্কুলের ১৭ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষার্থী।
শুরু থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ফিডিং প্রকল্পের সাফল্য আসে বেশ । নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা অনেকটাই আগ্রহী হয় স্কুল মুখী হতে । কমে আসে ঝড়ে পড়ার হার । তবে চলতি বছরের জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় সরকারের এই কার্যক্রম । এতে রংপুর জেলার সোয়া লাখ শিক্ষার্থী একদিকে পড়েছে পুষ্টি সংকটে। অন্যদিকে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকে ঝড়ে পড়া শিশুর সংখ্যা।
জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার হাবু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিবাভক মমিন মিয়া বলেন, ”আমরা গরিব মানুষ। সরকার ফ্রী লেখা পড়ার সুযোগ করে দিছে জন্য সন্তানকে স্কুলে পাঠাইতে পারি। স্কুলোত বিস্কুটও দেয়, সন্তানও খুব খুশি থাকে। কিস্তু এখন শুনতেছি বিস্কুট আর দিবার নয়, এখন তো তাইলে প্রতিদিন টিফিনের জন্য টাকা দেওয়া নাগবে”।
কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন,” করোনা মহামারীতে দেড় বছর বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। কিন্তু এখনও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ হচ্ছে না। তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন,” বিস্কুটের প্রতি একেকটা শিক্ষার্থীর অন্যরকম আগ্রহ রয়েছে। বিস্কুটের জন্য হলেও তারা ক্লাসে আসে । কিন্তু প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন আর শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়তে পারে”।
ওই প্রতিষ্ঠানের সুমাইয়া বেগম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ”আমরা অনেক সময় সকালে না খেয়ে স্কুলে আসি। আর স্যারেরা টিফিনের সময় আমাদের বিস্কুট দেয়। আমরা সকল বন্ধুরা এক সঙ্গে বিস্কুট খেতাম। করোনার সময়ও স্যারেরা আমাদের বাসায় গিয়ে বিস্কুট দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন আর স্কুল খুললেও বিস্কুট দিচ্ছে না।
গঙ্গাচড়া চর ইসরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজগর আলী বলেন, চরাঞ্চলের শিশুরা স্কুল ফিডিং সুবিধার আওতায় থাকার কারণে ঝড়ে পড়া কমে এসেছে। স্কুল ফিডিং বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে যেমন ঝড়ে পড়ার হার বাড়বে অন্যদিকে স্কুলে আসতেও আগ্রহ হারাবে শিক্ষার্থীরা । তাই সরকার যদি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং স্কুল ফিডিং চালু রাখে তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানো সহজ হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, ”প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি । আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়তে পারে ।
তিনি আরও বলেন, আশা করছি এটি বাস্তবায়িত হবে। আর এটির বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের সহজে ক্লাসে ফেরানো সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি তাদের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।
Leave a Reply