মোঃ হুমায়ুন মিয়া :
নরসিংদীর চরাঞ্চচলের অতিপরিচিত একটি নাম টেটা! কালক্রমে মানুষ সভ্যতার যুগে প্রবেশ করলেও রয়ে গছে টেটা যুদ্ধ। স্থানীয়দের মতে নদী ও জলাধারে বাস করা গ্রামের মানুষ মাছ শিকারের জন্য এই টেটা ব্যবহার করতো। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা তা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করতে তার ব্যবহার শুরু করে। সেই থেকেই চরাঞ্চলে টেটা দিয়ে এখন আর আগের মতো মাছ শিকার না হলেও শিকার হয় মানুষ। প্রশাসন মাঝে মাঝেই অভিযান চালিয়ে টেটা উদ্ধার করে স্থানীয়দের কে নিবৃত করার চেষ্টা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মাধবদী থানার চরদীঘলদী ইউনিয়নের অন্তরামপুর গ্রামের বাক্কা মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়ার বাড়ি থেকে( ৫০-৬০) টির মতো টেটা উদ্ধার করে মাধবদী থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) গোপন সূত্রে খবর পেয়ে টেটা উদ্ধারে নামে মাধবদী থানা পুলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় – অনন্তরামপুর এর বাসিন্দা বাক্কা মিয়ার ছেলে জয়নাল এর বাড়ি থেকে টেটা উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে জয়নাল মিয়া তার বাড়িতে টেটা মজুত রেখে একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী গ্রাম দোয়ানী, চরদিঘলদীতে সরবরাহ করে থাকে। এর আগেও জয়নালের বাড়ীতে টেটা লাগানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
জয়নাল মিয়া তার বাড়ি থেকে টেটা উদ্ধার এর কথা স্বীকার করে বলেন, বিকালে এস আই সানোয়ার টেটা উদ্ধার করেন। তিনি আত্মরক্ষার জন্য তা রেখেছেন বলে জানান। তবে তিনি আর টেটা রাখবেন না এবং টেটা যুদ্ধ আর চান না বলেও সাংবাদিকদের জানান।
অনন্তরামপুরের স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এখানকার অধিকাংশ লোকই টেটা ব্যবহার করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। তবে টেটা যুদ্ধের মতো অমানবিক কাজ আর তারা চান না বলেও জানান।
চরদীঘলদী ইউনিয়ন এর স্থানীয় বাসিন্দারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদী পুলিশ সুপার এর পক্ষে প্রশাসনের লোকজন এসে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কে সাথে নিয়ে টেটা যুদ্ধ বন্দের জন্য শান্তি পূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে বিরোধীয় পক্ষদ্বয় কে মিলিয়ে দেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ছোট-খাট কিছু বিষয় ব্যতীত এলাকা শান্ত থাকলেও আবার টেটা উদ্ধার এর ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিচলিত।
এবিষয়ে মাধবদী থানার এস আই সানোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইলে তিনি জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অনন্তরামপুরের জয়নাল এর বাড়ি থেকে (৫০-৬০)টির মতো টেটা উদ্ধার করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল মুনসুর এর বাড়িতে গেলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে আবু মনসুর চেয়ারম্যান এর পক্ষের লোক বলে পরিচিত
চরদীঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দার সাবেক মেম্বার ডাঃ ছাদেকুর রহমান বলেন – আমরা টেটা যুদ্ধ চাই না। প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আমরা এখন শান্তিতে আছি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বসে টেটা যুদ্ধ বন্দ করে এলাকায় শান্তি ফিরাতে তিনি আহবান জানানএবং বর্তমানে যারা এলাকার বাহিরে তাদের কেও এলাকায় এসে শান্তিতে বসবাস করার জন্য বলেন।
চরদিঘলদী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি মোঃ আজগর আলী প্রধান বলেন-
চরদিঘলদী ইউনিয়নের জনগন এবং আমরা বাজারে ব্যবসায়ীরা সকলে মিলে শান্তিতে বসবাস করছি। এলাকার গুটি কয়েকজন লোক যারা মাদক সহ বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত পলাতক আসামি তারা এলাকার বাহিরে থাকে। আমি বাজারে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আহবান করবো তারাও যেনো আইনের প্রতি সন্মান জানিয়ে এবং এলাকার গণমানুষের শান্তির কথা চিন্তা করে সহিংস পথ পরিহার করে আমাদের সকলের সাথে মিলেমিশে এলাকায় বসবাসের আহবান জানান।
এবিষয়ে মাধবদী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সৈয়দুজ্জামান কে থানায় না পেয়ে মোবাইলে বার বার কল দিয়েও কোন সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের প্রশ্ন বহিরাগত লোকদেরকে দিয়ে রাতের আধারে দোয়ানী,চরদিঘলদীতে ককটেল বিস্ফোরণ সহ টেটা যুদ্ধ বন্দ হবে কি (?) তারা টেটা যুদ্ধ নয় চান শান্তি পূর্ণ সহাবস্থান। এজন্য সরকার ও প্রশাসনের ধারাবাহিক সহযোগিতাই কাম্য তাদের। আইনের সুশাসন এর মাধ্যমে তারা অভিশপ্ত টেটা যুদ্ধের চির অবসান চান।
Leave a Reply