রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পূর্বঘোষিত ৫০ শয্যার নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু ও আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করাসহ ৪ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ‘জনতার রংপুর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
আজ বুধবার (২৮ জুলাই) দুপুরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ রেজাউল করিমকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
এসময় জনতার রংপুর এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মামুনুর রহমান, সংগঠক গৌতম রায়, মাজিদুল ইসলাম লিটন, আব্দুল কুদ্দুস, রফিক সরকারসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় শনাক্ত বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ দাড়িয়েছে।
স্বারকলিপিতে বলা হয়, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালে আইসিইউ ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত হাইফ্লো ন্যাজাল কেনুলা সরবরাহসহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ, বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা, চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে “জনতার রংপুর” চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ব্যবস্থাপনার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু রোগীর সেবার মান বাড়ানো বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোন উন্নতি হয়নি।
সংগঠনটির আহ্বায়ক ডাঃ সৈয়দ মামুনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সক্ষমতা থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। এতে করোনা আক্রান্ত রোগীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পশ্চিমে নতুন একটি ভবনে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপন করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গত ৭ জুলাই করোনা রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোসহ সংকট মোকাবেলায় অনুষ্ঠিত সভায় নতুন করে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নেন করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটি। ঘোষণা অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ওয়ার্ডটি চালুর কথা ছিল। কিন্তু তিন সপ্তাহেও করোনা ওয়ার্ড চালুর ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ রেজাউল করিম জানান, করোনা রোগীর চাপ বাড়াতে বিভাগের একমাত্র বিশেষায়িত করোনা আইসোলেশন হাসপাতালেও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে রমেক হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় একটি ৭১ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ৫১ রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া ওই ইউনিটে আগের পাঁচটির সঙ্গে আরো ৪টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যুক্ত করা হয়েছে।
পূর্বঘোষিত আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর বিষয়ে তিনি জানান, জরুরি বিভাগের পশ্চিমে নতুন একটি ভবনে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আরেকটি আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী না থাকায় বিলম্ব হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
রংপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে একটি নতুন আইসোলেশন ইউনিটের কাজ গত এপ্রিল মাসে দ্বিতল ভবনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রম চালুর জন্য বুঝে নিতে বলা হয়। কিন্তু সে সময় তাদের পক্ষ থেকে কোন সারা মেলেনি। ১০ তলা বিশিষ্ট ওই অবকাঠামোর ৬ তলা পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েকদফা ওই ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখনো তারা বুঝে নিচ্ছেন না। সর্বশেষ গত ৬ জুলাই ভবনটি বুঝে নিতে পত্র দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের দেড় কোটির বেশি মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বিভাগের আট জেলার সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ১০টি (সচল ৮টি), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি এবং দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি। প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বর্তমানে ফাঁকা শয্যা মিলছে না।
Leave a Reply