৩ লাখ টাকায় মিনিবাস বানিয়ে তাক লাগালেন কুড়িগ্রামের নয়ন। এরইমধ্যে ভ্রমণ পিপাসুদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে নয়নের মিনিবাসটি। প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রুপে গাড়িটি ভাড়া নিয়ে রংপুরের সাত মাথা, কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দর, ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান তারা।
স্ত্রীর নামে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বানানো মিনিবাসটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এতে রয়েছে আটটি আসন, চারটি চাকা ও ছয়টি ব্যাটারি। জ্বালানি তেল লাগে না, তৈরি হয় না পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া। মিনিবাসটি একদিকে নয়নকে এনে দিয়েছে জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে দূর করেছে বেকারত্ব।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার পাড়ার বশির উদ্দিনের ছোট ছেলে শওকত আলী নয়ন, বাবাকে হারান ছোটবেলায়, মাকে হারান ২০০৫ সালে। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা না থাকায় বেকার ছিলেন বহুদিন। এরপর কুড়িগ্রাম পৌর বাজারের পিটিআই অফিসের সামনে একটি মুদি দোকান শুরু করেন। কিছুদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় স্ত্রী সন্তানের ভরণ-পোষণ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে বাড়ির পাশে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করেন নয়ন। প্রায় তিন বছর ব্যবসা করার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড় বছর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে পার করেছেন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন অটোরিকশা কেনার।
শওকত আলী নয়ন বলেন, আমি যখন অটোরিকশা কেনার চিন্তা করলাম। তখন আরেকটি চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল- আমি মুদি ব্যবসায়ী ছিলাম। এখন অটোরিকশা চালালে মানুষ কি বলবে? এরপর চিন্তা করি অটোরিকশার আদলে অন্যকিছু করা যায় কিনা। সেই চিন্তা থেকেই মিনিবাসের মতো যানবাহন বানানো শুরু করি। পরিবেশ দূষণ কমাতে মিনিবাসে ব্যবহার করি অটোরিকশার চাকা ও ব্যাটারি।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি একজন মেকানিকের সহযোগিতায় বগুড়া থেকে পার্টস ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে কাজ শুরু করি। টাকা না থাকায় স্ত্রী শাহানা বেগমের নামে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দীর্ঘ দুই মাস পরিশ্রম করে মিনিবাসটি তৈরি করি। অটোরিকশায় ৩টি চাকা ও ৫টি ব্যাটারি থাকলেও আমার গাড়িতে লাগানো হয়েছে ৪টি চাকা ও ৬টি ব্যাটারি। এছাড়া হ্যান্ডেল বারের পরিবর্তে স্টিয়ারিং লাগানো হয়েছে। মিনিবাসটিতে চালক ও যাত্রীদের জন্য বাম পাশে দুটি দরজা আছে। ভেতরে চালকসহ আটজন আরামে বসতে পারবেন।
শওকত আলী নয়ন বলেন, পুরো মিনিবাসটি তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছে তিন লাখ সাত হাজার টাকা। পুরোটাই এনজিও থেকে ঋণ নেয়া। এখনো প্রতিমাসে কিস্তি দিচ্ছি সাত হাজাত টাকা করে। তবে এই মিনিবাস তৈরির পর থেকে আমার ভালো আয় হচ্ছে। স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই আছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি বিভিন্ন ক্যাটাগরির পরিবেশবান্ধব যানবাহন তৈরি করতে পারব। এতে খরচ কমবে, দূষণ থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ।
মিনিবাসটি কেনার জন্য অনেকেই ছুটছেন নয়নের কাছে। ফুলবাড়ী উপজেলার এক সৌখিন গাড়িচালক মিনিবাসটির দাম বলেছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পর্যাপ্ত দাম পেলে গাড়িটি বিক্রি করার পরিকল্পনাও আছে নয়নের। তিনি স্বপ্ন দেখেন নতুন নতুন যানবাহন তৈরি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার।
স্থানীয় বাবুল হোসেন বলেন, অটোরিকশার আদলে মিনিবাস তৈরি করে সবার নজর কেড়েছেন শওকত আলী নয়ন। তার এ আবিষ্কারকে মূল্যায়ন করা দরকার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরো ভালো কিছু করতে পারবেন।
কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার মিজানুর রহমান ভজু বলেন, শওকত আলী নয়নের তৈরি মিনিবাসটি পরিবেশবান্ধব ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত। এমন গাড়ি কুড়িগ্রামে এই প্রথম। সহযোগিতা পেলে নয়ন এমন আরো যানবাহন বানাতে পারবেন।
হারুন অর রশিদ নামে এক চালক বলেন, শওকত আলী নয়নের তৈরি মিনিবাসটি সড়কে বের হলে মানুষ তাকিয়ে থাকে। এটি বাইরে থেকে দেখতেও সুন্দর, ভেতরে বসে ভ্রমণ করাও আরামদায়ক। প্রায় প্রতিদিনই ১০০০-১২০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে মানুষ।
Leave a Reply